১ম মৃত্যু বার্ষিকী
বুঝিনি কবু বাবা এভাবে বিজয় মাসে বিদায় ঘন্টা বাজাবে। যখন
বাবা পাশে ছিল এক মূহুর্তেও মনে করিনি বাবা হারিয়ে যাবে। বাবার মৃত্যুর আমন্ত্রণ এতো
ঘনিয়ে জানলে তৃপ্তিভরে ‘বাবা’ ডেকে নিতাম। একটানা এক বছর চার মাস আরোগ্যে কোন ডাক্তার
কবিরাজ সনাক্তা করতে না পারায় বিভিন্ন ঔষুধ সেবনে ছিলেন ব্যাস্ত আমার বাবা। শারিরীক
এতো অসুস্থতার পরও চিন্তা-চেতনা, দেহ-বল ছিল সতেজ। তাঁর চ লাফেরা ছিল স্বাভাবিকের ন্যায়।
রাতে ব্যাথা যন্ত্রণা বাড়লেও দিনে রীতিমত চালিয়ে যায় তাঁর প্রয়োজনীয় কাজ-কাম। বোঝা
যেতনা তিনি একজন অসুস্থ। কোন কাজে খাম-খেয়ালী ছিল না তাঁর। এতো পরিশ্রমী, ধার্মিক,
সৎ, সত্যবাদীর পরিচয় দিয়ে গেল আমাদের কাছে। যেমন ছিল গরম মেজাজী তেমন ছিল সাধু, দয়ালু, হৃদয়বান সাদা-মাটা। মিষ্টি কথায় কারো মন ভোলার চেয়ে
তিক্ত কথায় স্পষ্টবাদী তাঁর স্বভাব। সুতরাং যার দরুণ লোকের কাছে তেমন প্রিয় হয়ে
উঠেনি। কোন বদঅভ্যাস, অপব্যায়ে মগ্ন ছিল না। তাঁর অসাধ্য চেষ্টায় আমাদের এত বড়
সংসারে অভাবের ছোঁয়া লাগেনি। সংসারে ৬ভাই ৩বোন কে গড়েছে মানুষ করে। বাবা হয়ে ঋণী
থাকেনি সন্তানের কাছে। ‘মা’ আর ‘বাবা’ ডেকে তৃষ্ণা মিটেনী। মনে করেছিলাম মা’ই শুধু
পাষান বাবার হাতে তুলে দিয়ে আমাদের অসহায় রেখে বিদায় দিল। কিন্তু দেখি বাবা, মায়ের
চেয়ে কম পাষাণ নয়। সে ও কিভাবে একাকী ফেলে চলে গেল আমাদের নিঃস্ব করে। ডিসেম্বর
নজিরবিহীন বাংলার বিজয় এবং স্বাধীনতার মাস হিসেবে বাঙ্গালীর মনে
আবেগাপ্লুত স্মৃতির শোক বয়ে যায় যুগ যুগ ধরে। সেই ডিসেম্বরের মধ্য দিয়ে ঝরে যায়
বিভিন্ন স্মৃতি বিজড়িত একটি পূর্ণাংগ বছর আর সূচনা হয় সজ্জিত নতুন বছর। বাবাও কি সে
অবিকলে সমাপ্তি ঘটাল বিজয় মাস এবং অতিবাহিত একটি সম্পূর্ণ বছর আর
নতুন বছরের আগমনে! নয় মান যুদ্ধে ত্রিশ হাজার মা-বোনের ইজ্জত আর রক্তের বিনিময়ে এই
ডিসেম্বর বিজয় মাসের উড্ডয়ন, লাল বৃত্তিকায় সবুজ পতাকা উদয়নে ব্যাথা-বেদনাহত মুক্তমনায়
হাসি উৎফুল্ল সারা বাংলা ডিসেম্বরের আগমনে । বিজয়ের মাস ডিসেম্বর ছিনিয়ে আনতে যেমন
ছিল কষ্টের ফল তেমনি বিদায় বেলা আরও বেদনাদয়ক। সে ডিসেম্বর বিদায়বেলা কেড়ে নিয়
যাই আমার প্রাণপ্রিয় ‘বাবা’কে। ৩১ তারিখ রাত ১২টা পার হয়ে
১তারিখে যখন পা দেয় বাবার বিদায় ঘন্টা বাজে। ভোর না হতে বাবা পরিবারের সবার
(প্রত্যেক সন্তানের) কাছে দায়িত্ব তুলে দিয়ে সুস্থভাবে বিদায় নেয়। সবাই কান্নায়
কলরোলে পাগলপারা। এই কি বাস্তব বিশ্বাসের অযোগ্য অশ্রুজলে সিক্ত প্রত্যেকে। বিজয়মালায়
ডিসেম্বর বাঙ্গালীর মনে যেমন গৌরব জন্মালো
তেমনি আর একটি ইতিহাসের সূচনা ঘটালো বাবা’র নিশির রাতে চিরনিদ্রায়। এই দিনটিতে
অশ্রুজলে সিক্ত, বেদনায় মক্ত ছাড়া আর কিছু দেবার নাই বাবা
তোমাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন